সেনাবাহিনীর স্টাডি ইউনিটের একটি অনুষ্ঠানে গান গাইতে তনুকে অনুরোধ করা হয়েছিল। ওইখানে সে গান না গেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সিলেট ভ্রমণে চলে যায়। পরে তারা কুমিল্লা থেকে
‘হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অ্যালবাম নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হয়। ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছে ওরা।’ আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিআইডি কার্যালয়ে ঢোকার আগে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম এ কথা বলেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে এসময় এই হত্যাকাণ্ডে দুই সেনাসদস্যসহ তিনজন জড়িত বলেও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন তিনি। তনুর বাবা ইয়ার হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিআইডি কার্যালয়ে সপ্তমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডাকা হলে পথে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।
তাদের দাবি অনুযায়ী অভিযুক্তরা হচ্ছেন কুমিল্লা সেনানিবাসের সার্জেন্ট জাহিদ, তার স্ত্রী ও সিপাহী জাহিদ।
তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মচারী মো. ইয়ার হোসেন ও মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সার্জেন্ট জহিদ ও সিপাহি জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তনু হত্যাকাণ্ডের সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
তারা বলেন, ‘বার বার জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এখন ক্লান্ত। যাদের বাসায় পড়তে গিয়ে তনু হত্যা হয় তাদের কাউকেই ওইভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না। তাদের বাসার শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, অনেক আক্রোশের কারণে তনুকে হত্যা করা হয়েছে। তার গোটা শরীরে মারের আঘাতের চিহ্ন ছিল দাবি করে তনুর মা বলেন, ‘গান না গাওয়ার আক্রোশেই তাকে হত্যা করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এর বাইরে যদি আর কোনো রহস্য থাকে তাহলে তাও খুঁজে বের করা দরকার।’
এত দিন পর কেন এ কথা বলছেন,সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়ে হারিয়ে আমরা পাগলপ্রায়। মেয়েটির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক। বাসার যে কক্ষে যাই, সেখানেই তার স্মৃতি। তাই সব কথা সব সময় মনে আসে না। এখন বিচারও পাচ্ছি না, সান্ত্বনাও পাচ্ছি না। তাই মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য আল্লাহর দিকে তাকিয়ে আছি।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল। চুল কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। বাদী হয়ে গত ৫০ দিনেও এ মামলার কোনো কিনারা দেখছি না। যেখানে আমাদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে সহযোগিতা নেই, সহমর্মিতাও নেই।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়ের শরীরে এত আঘাত ছিল। চুল কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। বাদী হয়ে গত ৫০ দিনেও এ মামলার কোনো কিনারা দেখছি না। যেখানে আমাদের সবার সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেখানে সহযোগিতা নেই, সহমর্মিতাও নেই।’
মঙ্গলবার তনুর পরিবারে চার সদস্যসহ মোট ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। ঢাকার সিনিয়র বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দের নেতৃত্বে সিআইডির একটি টিম এ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
উল্লেখ্য, গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার একটি ঝোপে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তনুর বাবা ইয়ার হোসেন পরের দিন কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সাইফুল ইসলাম এর তদন্ত করেন।
পরে তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে। ১ এপ্রিল তদন্ত দেওয়া হয় সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে। এ ছাড়া তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২১ মার্চ। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনায় দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয় ৩০ মার্চ।
এরপর ৪ এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করায় এ নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠে। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। এ হত্যাকাণ্ডের ৫১ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
0 Reviews:
Post Your Review