বাঁশখালী থেকে : বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে গুলিতে ৪ জন নিহতের পর আজ আবারো বিক্ষোভ করছে গ্রামবাসী। ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে না, হবে না’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে গণ্ডামারার হাদীর পাড়া ও রহমানিয়া মাদরাসার মাঠ। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সোমবার
সকাল থেকে গণ্ডামারা হাদীর পাড়া ও রহমানিয়া মাদরাসা মাঠ এলাকায় সমবেত হতে শুরু করে এলাকাবাসী। সমাবেশ থেকে এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা।
‘বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে না, হবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘নাসিরের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ ‘ভিটে-বাড়ি ছাড়বো না, বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে না ’ স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে আশপাশের এলাকা। এতে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার গ্রামবাসী।
সকালে ‘বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটি’র আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ জনগনের উপর গুলি চালিয়ে চার গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে। কিন্তু প্রয়োজন হলে জনগন আরো রক্ত দেবে, কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে দেয়া হবে না। নিহতদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।’
হাদীর পাড়া ও রহমানিয়া মাদরাসার মাঠ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে পুলিশি হামলায় ভেঙে দেয়া ‘বসত ভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটি’র মাইক ও সিএনজি অটোরিকশা। মাঠের বিভিন্ন অংশে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।রহমানিয়া মাদরাসার দেয়ালে ও আশপাশের বিভিন্ন গাছে রয়েছে গুলির দাগ। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। বাড়িতে বাড়িতে কান্নার রোল এখনো শোনা যাচ্ছে। সংঘর্ষে আহতদের অনেকেই মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজ ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এছাড়া গতকাল রাত থেকে গণ্ডামারা ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রবেশ পথে পাহারা বসিয়েছেন গ্রামবাসী। বিদ্যুৎকেন্দ্র লোক নয় এমনটা নিশ্চিত হয়েই যাতায়াতকারীদের গ্রামে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিহতের বিষয়টি প্রথমে নিশ্চিত না করলেও পরে চারজন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে এলাকাবাসীর সাথে লাগা এ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে। তাদের দাবি নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ৫০ জন। ঘটনার সময় প্রায় ৭৮০ জনের পুলিশ ফোর্স মোতায়েন ছিলো এবং প্রায় শতাধিক রাউণ্ড গুলির ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলার গণ্ডামারার উপকূলীয় এলাকায় এস. আলম গ্রুপ ও চাইনা সেফকো কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে গত কয়েক মাস ধরে এলাকাসাীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাধা প্রদান করছে স্থানীয় জনতা। প্রকল্পের পক্ষে-বিপক্ষে দুইটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। একটি পক্ষ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিরোধে মিছিল মিটিং, সভা, সমাবেশের মাধ্যমে জোর প্রতিবাদ চালাচ্ছে। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম মাষ্টার। এর আগেও গত ১৮ মার্চ এনিয়ে দু’পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। পরে সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে নিয়ে পুলিশ বিদ্যুৎ ক্দ্রে বিরোধী মিছিলে গুলি চালিয়ে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হাজী পাড়া স্কুল মাঠে সমাবেশের ডাক দেন প্রতিরোধ কমিটি। আর একই সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে সমাবেশের ডাক দেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল আলম। সেকারণে পুলিশ সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। তবে বিকেলে ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করতে গেলে প্রতিরোধ কমিটির সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষের লোকজনও সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
0 Reviews:
Post Your Review