স্মৃতি কত প্রতারক! নইলে ‘মুস্তাফিজ, মুস্তাফিজ’ রব কেন আড়াল করে দেবে রোহিত শর্মার নাম?
বাংলাদেশ দলে মুস্তাফিজুর রহমান
একটা ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে ওঠেন গত বছরের জুনে হওয়া ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজ থেকে। প্রথম দুই ম্যাচেই ৫-৬ করে ১১ উইকেট, তিন ম্যাচে ১৩টি। এরপর থেকে দুই দলের ম্যাচে বাঁহাতি এই তরুণকে নিয়ে হইচই হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং এবার প্রথম সাক্ষাতে তা হলোও। সেই হইচইয়ের মধ্যে আড়াল হয়ে গেল রোহিতের নাম। অথচ এই ম্যাচের আগে তিনিও পারতেন আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে।
গত বছরের জুনে ‘কাটার মুস্তাফিজে’র আবির্ভাবের মাস তিনেক আগের ঘটনা। বিশ্বকাপের ম্যাচে মেলবোর্নে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর থেকেই এই দুই দলের ম্যাচে যা হয়, সেটা হলো ওই ম্যাচের আগেও। ভারতের সামনে বাংলাদেশ দলের বাঘ হয়ে ওঠার আশা ছড়িয়ে পড়ল সবখানে। হলো উল্টোটা। ভারতের গায়ে কোনো আঁচড়ই কাটতে পারল না বাংলাদেশ। ৩০২ রানের জবাবে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে ১০৯ রানের বিশাল হার।
বাংলাদেশ সেদিন ভারতের কাছে হেরেছিল নাকি রোহিত শর্মার ১৩৭ রানের ইনিংসের কাছে, সেটা একটা প্রশ্ন। অনেকে অবশ্য এখনো মনে করেন, ওই হার ছিল আসলে আম্পায়ারদের কাছে। তবে এটা তো ঠিক, ব্যক্তিগত ৯০ রানের মাথায় ক্যাচ দিয়েও আম্পায়ারদের ডাকা ‘নো’ বলের সৌজন্যে বেঁচে যাওয়ায় অন্তত রোহিতের নিজের হাত ছিল না। তা ছাড়া ওই সময় আউট হয়ে গেলেও ভারতের জয়ে তাঁর অবদানটাই থাকত সবচেয়ে বেশি।
সেই রোহিতকে এবার সবাই কেমন করে ভুলে গেল? দুই দলের সর্বশেষ সিরিজে রোহিতকে ছাপিয়ে মুস্তাফিজের বিস্ময়-জাগানিয়া আবির্ভাব এর একটা কারণ হতে পারে। তিন ম্যাচে রোহিত করেছিলেন ৬৩, ০, ২৯। অন্যদিকে কাটার-স্লোয়ারের বিষ ছড়িয়ে অভিষেক সিরিজেই মুস্তাফিজ হয়ে ওঠেন ভিনগ্রহের এক বোলার। সঙ্গে বাংলাদেশ দলের সিরিজ জয় মিলিয়ে কেউ ভাবতেই পারল না যে পরেরবার আবারও বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে রোহিত শর্মার ব্যাট।
মিরপুরের সবুজ উইকেটে কাল শুরুর দিকে বাংলাদেশের পেসাররাই ছিলেন বেশি ভয়ংকর। চতুর্থ ওভারে মুস্তাফিজের হাতে বল আসার আগেই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ড্রেসিংরুমে। ৮ ওভারের মধ্যে দলের ৪২ রানে বিরাট কোহলি আর সুরেশ রায়নাও নেই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পরিপূর্ণ গ্যালারি তখন আরেকটি ইতিহাস রচনা হতে দেখার অপেক্ষায়। কিন্তু তখনো কেউ জানত না, দিনটা আসলে রোহিত শর্মার, মুস্তাফিজের নয়।
খাদের কিনার থেকে টেনে তুলে দলের স্কোরবোর্ড উজ্জ্বল করে তোলায় এদিনও তাঁর ব্যাট থেকে আসা ৮৩ রানই ভারতের বড় ভরসা হলো। আর মুস্তাফিজ? অভিষেকের পর এই প্রথম যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজলেন! প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দিলেও পরের ৩ ওভারে হারিয়ে ফেললেন ছন্দ। তৃতীয় ওভারে তো দিলেন ২১! এটা যেমন তাঁর ১ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড, তেমনি আগের সাতটি টি-টোয়েন্টিতেও কখনো ৪ ওভারেও ৪০ রান দেননি।
দিনটা তাই মুস্তাফিজের হলো না, হলো রোহিত শর্মার এবং সেই সূত্রে ভারতেরও। তবে একটা দিক দিয়ে মুস্তাফিজের সঙ্গে নিজের মিল রেখে দিলেন রোহিত। এই ম্যাচে ছোট একটা রেকর্ড যে গড়েছেন তিনিও! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি রান (১৭৫) এখন তাঁরই।
0 Reviews:
Post Your Review