শহরে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে নিহতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সৌদি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন এই নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তারা বলছেন, ভিড়ের চাপ এবং হুড়োহুড়ির কারণে অনেক হাজি পদদলিত হয়ে মারা গেছেন।আহত হয়েছেন ৮০০-য়ের বেশি মানুষ।
এবার পবিত্র হজ্জে গিয়েছিলেন বিবিসির কয়েকজন সাংবাদিক। তাদের মধ্যে দু’জন ঘটনাস্থলে কী দেখেছেন, তার বর্ণনা পাঠিয়েছেন।
বিবিসি-র সাংবাদিক বশির সা’দ আবদুল্লাহি মিনার বিপর্যয়ের স্থান থেকে আকস্মিক হুড়োহুড়ির এই বর্ণনা পাঠান: “মিনা শহরের কেন্দ্রস্থলে যেখানে আমি দাড়িয়ে আছি, সেখান থেকে আমি সাদা চাদরে ঢাকা মৃতদেহ দেখতে পাচ্ছি। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে তাই আমি মৃতদেহগুলো গুনতে পারিনি।
“কিন্তু আমার চোখ যতদূর দেখতে পারছে, তত দূর আমি শুধু মৃতদেহই দেখতে পারছি। এলাকার আশে-পাশে বেশ কয়েকজন শোকাহত আত্মীয়-স্বজন ঘুরছেন, এবং মিনার তাঁবু শহর থেকে অন্যান্য হাজিরাও এসেছেন দেখতে এবং সমবেদনা জানাতে।
“পুলিশ মৃতদেহগুলো একত্র করছে এবং এলাকার ভেতর দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, একই সাথে একের পর এক এ্যাম্বুলেন্স আসছে আর যাচ্ছে।
“তবে আমরা যেহেতু ঘটনাস্থলে ঢুকতে পারছি না, আমরা জানি না এ্যাম্বুলেন্সগুলো কী করছে।যেখানে মৃতদেহগুলো রাখা হয়েছে তার উপর হেলিকপ্টার ঘোরা ফেরা করছে”।
‘সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য কেউ ছিল না’
বিবিসির হাউসা সার্ভিসের সাংবাদিক সিমা ইলা ইসুফু ঘটনাস্থলের খুব কাছে ছিলেন। তিনি আমাদের জানান তাঁর ফুফু হুড়োহুড়ির ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:”যেখানে গিয়ে পাথর ছুড়তে হয়, অনেক লোকজন সেদিক যাচ্ছিলেন, আবার অনেক লোক বিপরীত দিকে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে সব বিশৃঙ্খল হয়ে পরে এবং হঠাৎ করে মানুষ মাটিতে পরে যেতে শুরু করে।
“সেখানে নাইজেরিয়া থেকে আসা মানুষজন ছিল, সাদ থেকে আসা লোকজন, সেনেগালের নাগরিক আর অন্যান্য দেশের লোকজন।
“লোকজন নিরাপদ জায়গায় যাবার জন্য এক অপরের উপরে উঠতে শুরু করে, এবং সেভাবেই অনেক লোক মারা যান। অনেকে আল্লাহ-র-নাম ডাকছিলেন, অন্যদিকে বাচ্চা এবং শিশুসহ অনেকে কাঁদছিলেন।
“মানুষ মাটিতে পরে সাহায্য চাচ্ছিলেন, কিন্তু তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য কেউ ছিল না। ঘটনার ছাপ আমি যে দলের সাথে ছিলাম তাদের উপর পরে।
“হুড়োহুড়ি এবং মানুষের পায়ের চাপে আমি আমার ফুফুকে হারাই এবং আমাদের দলের আরো দুজন নারী, একজন মা এবং তার মেয়ে, এখনো নিখোঁজ রয়েছে”।
প্রসঙ্গত- এর আগে ২০০৬ সালে মিনায় পদদলিত হয়ে ৩৬৪ জন হাজি মারা যান।
মিনায় উদ্ধার কাজ চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রায় ২০ লক্ষ মুসলমান এ বছর হজ্জ পালন করছেন। এ’বছর হজ্জ প্রস্তুতির সময় আরেকটি ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
এর আগে হজ্জের সময়ের দুর্ঘটনা
১৯৮৭: ইরানপন্থীদের বিক্ষোভে সৌদি আরব সরকারের সাথে সংঘর্ষে ৪০০ জন মারা যান।
১৯৯০: ১,৪২৬ জন হাজি সুড়ঙ্গ পথে যাওয়ার সময় পদদলিত হয়ে মারা যান।
১৯৯৪: পদদলিত হয়ে মারা যান ২৭০ জন।
১৯৯৭: ৩৪৩ জন নিহত হন, আহত হন এক হাজার পাঁচশ জন।
২০০৬: ৩৬৪ জন নিহত হন মিনায় পাথর ছোঁড়ার সময়।
মসজিদ আল-হারাম
এ’মাসের ১১ তারিখে মক্কার মসজিদ আল-হারাম-এ একটি বড় ক্রেন ভেঙ্গে পড়লে ১০৭জন নিহত হয়েছেন।
মসজিদ আল-হারাম-এ নামাজিদের সংখ্যা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদ সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে।
যে ক্রেন মসজিদের ছাদ ভেঙ্গে পড়ে সেটা সম্প্রসারণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল।
0 Reviews:
Post Your Review