ডিমেরই স্হান৷ দেখা যাক, কী থাকে একটা ডিমে! ডিমের গড় ওজন প্রায় ৬০ গ্রাম৷ এতে প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে মাত্র ৬ গ্রাম করে৷ কাজেই এদের হজম করা কোনো ব্যাপার নয়৷ এছাড়া থাকে ৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১.৫ মিলিগ্রাম লোহা, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ৮ গ্রাম এবং অধাতব পদার্থ ৩ গ্রাম, যার মধ্যে ভিটামিন সি বাদে অন্য সব ভিটামিনই থাকে৷ পানি থাকে প্রায় ৩৫ গ্রাম৷ কোলেস্টেরল থাকে প্রায় ৭০০ মিলিগ্রাম এবং শক্তি পাওয়া যায় ৭০ ক্যালরির মতো৷ আমাদের দেহ গঠনের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উপাদান যে ৮টি অ্যামাইনো অ্যাসিড, তার সব কটিই ডিমে থাকে৷ সেই অর্থে ডিম অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য এবং সহজপাচ্যও বটে৷ অর্থাৎ ডিম গরম খাদ্য নয়৷ সেজন্য রোগীদের খাদ্যতালিকায় ডিমের স্হানটি বরাবরের জন্য বাঁধা৷ অনেক বাড়িতে বসন্ত, হাম-সহ নানা ভাইরাসঘটিত রোগ দেখা দিলে, ডিমের প্রবেশ বন্ধ হয়৷ অথচ এ সময় শরীরে বাড়তি পুষ্টির জন্যে ডিম
অবশ্যই প্রয়োজন৷ ডিমের নানা গুণপনা থাকা সত্ত্বেও, তার কপালে নানা নিন্দেমন্দ জোটে কেন? কারণ, ভালো ডিম সব সময় বাজারে পাওয়া মুশকিল৷ ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপরে ১২ ঘণ্টার বেশি ডিম রাখলে তার পুষ্টিমূল্য কমে যায়৷ অথচ আমাদের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গড় তাপমাত্রা সব সময়েই ৩০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থাকে৷ রাস্তাঘাটে বা হোটেল-রেস্টুরেন্টে পচা ডিমের ছড়াছড়ি৷ রান্নাগুণে তাদের পচনত্ব চাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ সেজন্য বাইরের ডিম এ সময় বিষতুল্য৷ যদি খেতেই হয়, বাড়িতে এনে ভালো করে ধুয়ে সেদ্ধ করে খেতে হবে৷ সুসেদ্ধ মানে কমপক্ষে ৮৷১০ মিনিট ধরে সেদ্ধ করতে হবে৷ কাঁচা বা অর্ধসেদ্ধ ডিম হজম হয় না নানা কারণে৷
হাঁসের ডিমে ‘ট্রিপসিন ইনহিবিটর’ নামক এক পদার্থ থাকে, যা আমাদের অগ্নাশয় গ্রম্হি থেকে ক্ষরিত পাচক রসের ট্রিপসিন নামক একটি পদার্থের কাজে বাধার সৃষ্টি করে৷ এই ট্রিপসিন আবার আমাদের প্রোটিন পরিপাকে সাহায্য করে৷ কাজেই, সেক্ষেত্রে হাঁসের ডিম খেলে হজমে গন্ডগোল অবশ্যম্ভাবী৷ কিন্তু ৮৷১০ মিনিট ফুটিয়ে নিলে, এই ট্রিপসিন ইনহিবিটর নষ্ট হয়ে যায়৷ কাজেই ডিম সব সময় পূর্ণ সেদ্ধ করেই খাওয়া উচিত৷ এছাড়া কাঁচা ডিমে সালমোনেলা, সিগেলা ইত্যাদি কিছু জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে৷ গরমকালে এই আশঙ্কা আরো বাড়ে৷ বেশি ডিম উৎপাদনের জন্য এবং পোলট্রিকে জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য নানা জীবাণুনাশক রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা হয়৷ এর ফলে ক্ষতি হতে পারে৷ তবে শুধু ডিম নয়, যে কোনো খাদ্য উপাদানের ক্ষেত্রেই একথা সত্যি৷ কীটনাশকের ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে৷
বেশি ডিম খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্তনালি ও হৃদযন্ত্রের অসুখ হতে পারে৷ অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে৷ ফ্যাটি লিভার হতে পারে৷ কাজেই বেশি ডিম খাওয়ার কিছু হ্যাপা আছেই৷ কিন্তু তাই বলে সপ্তাহে ৩৷৪টি সুসেদ্ধ ডিম খেলে তেমন ক্ষতি কিছুই হয় না৷ শরীরও গরম হয় না৷ শুধু দেখতে হবে, ডিমটা যেন ভালো হয়৷ হাঁস, মুরগি বাছবিচারের দরকার নেই৷ ভালো করে সেদ্ধ করে খেলে দুটি থেকে প্রায় সমান পুষ্টিই পাওয়া যায়৷
এসব পড়ে পাঠক যেন আবার ভেবে বসবেন না যে ডিমের হয়ে ওকালতি করা হচ্ছে৷ ডিম কখনোই কমপ্লিট ফুড নয়৷ এতে প্রধান খাদ্য উপাদান কার্বোহাইড্রেট থাকে না, থাকে না ভিটামিন সি৷ বরং ডিমের ওই পরিমাণ পুষ্টি কিনতে যে মূল্য খরচ হয়, ওই একই মূল্যে বেশি পুষ্টি কেনা যায় গম, ডাল, সয়াবিন থেকে৷ বিভিন্ন ডাল মিলিয়ে-মিশিয়ে খেলে প্রয়োজনীয় সব অ্যামাইনো অ্যাসিডই পাওয়া যায়৷
ডিম নিয়ে আমাদের মনের মধ্যে নানা প্রশ্ন জাগে৷ এই প্রসঙ্গে সেই প্রশ্নগুলোর একটু বিজ্ঞানসম্মত উত্তর খোঁজা যাক৷ অনেকের ধারণা, ডিম থেকে অ্যালার্জি হয়৷ হয়, তবে সবার নয়৷ কারো কারো৷ যার হয়, তিনি ডিম খাবেন না৷ অ্যালার্জির প্রকাশ নানাভাবে হতে পারে৷ কখনো সারা গা চুলকোয়, লাল চাকা চাকা হয়ে ওঠে, মুখ ফুলে যায়, বেশি ঘাম হয়, শ্বাসকষ্টও হতে পারে৷
ডিম খেলে বাত হয়, অনেকে মনে করেন৷ বাতের অন্যতম কারণ রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি৷ ডিমের সাদা অংশে ইউরিক অ্যাসিড থাকে৷ তবে তা এত সামান্য যে, কোনো ক্ষতি হয় না৷ ডিম খেলে সব সময় রক্তচাপ বাড়ে, তাও ঠিক নয়৷ ডিমের সাদা অংশে থাকে সোডিয়াম সল্ট অফ অ্যালবুমিন, খুবই অল্প পরিমাণে৷ তবে অতিরিক্ত ডিম, বিশেষ করে ডিমের কুসুম খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে সে কথা আগেই বলেছি৷ এই কোলেস্টেরলের স্তর রক্তনালিতে জমে গিয়ে তাকে শীর্ণ করে তোলে, অবরোধ সৃষ্টি করে৷ পরোক্ষে রক্তচাপ বাড়তে পারে৷ কাজেই হাইপ্রেসারের রোগীদের ডিম কম খাওয়াই ভালো৷ বয়স্ক লোকেরা কোলেস্টেরলের বিপত্তি এড়াতে ডিমের সাদা অংশটিই শুধু খাবেন, শিশুদের খাওয়াবেন ডিমের কুসুম৷ কুসুমে প্রোটিন বেশি থাকে, হজম করাও সহজ৷ তবে সুস্হ মানুষদের এত বাছবিচার না করলেও চলে৷
0 Reviews:
Post Your Review